লালবাগ কেল্লার আদি নাম কি : লালবাগ কেল্লা, ঔরঙ্গাবাদ কেল্লা নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের ঢাকার পুরানো অংশে অবস্থিত একটি আইকনিক স্মৃতিস্তম্ভ। দুর্গটি 17 শতকে সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুঘল রাজপুত্র মুহাম্মদ আজম শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে তৈরি করেছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুর্গটিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, তবে এর আসল নাম লালবাগ কেল্লা ছিল না। তাহলে লালবাগ কেল্লার আদি নাম কি? আসুন খুঁজে বের করার জন্য ইতিহাসে ডুব দেওয়া যাক।
Table of Contents
লালবাগ কেল্লা সম্পর্কে
লালবাগ কেল্লাটি 1678 খ্রিস্টাব্দে মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল। প্রিন্স মুহাম্মদ আজম নির্মাণটি শুরু করেছিলেন, কিন্তু অন্য প্রদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে তিনি এটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তার উত্তরসূরি শায়েস্তা খান, যিনি বাংলার মুঘল গভর্নর ছিলেন, নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। তবে কেল্লার আসল নাম লালবাগ কেল্লা ছিল না। এটি প্রাথমিকভাবে ফোর্ট আওরঙ্গাবাদ নামে পরিচিত ছিল, যা তৎকালীন শাসক মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
দুর্গটি 18 একর এলাকা জুড়ে, এবং এর স্থাপত্যটি সাধারণ মুঘল নির্মাণশৈলীকে প্রতিফলিত করে। দুর্গের তিনটি প্রধান অংশ রয়েছে: মসজিদ, বিবি পরীর সমাধি এবং দিওয়ান-ই-আম। মসজিদটি দুর্গের পশ্চিম দিকে অবস্থিত, আর বিবি পরীর সমাধি পূর্ব পাশে অবস্থিত। দিওয়ান-ই-আম, যা জনসাধারণের শ্রোতাদের হল হিসেবে কাজ করত, দুর্গের কেন্দ্রে অবস্থিত।
লালবাগ কেল্লার আদি নাম কি
লালবাগ কেল্লার যা ঢাকার স্বর্ণিম ইতিহাসের একটি মহৎ স্মৃতি তুলে ধরে, সেটির পূর্বে বিভিন্ন নাম ছিল। যেমন:
- কল্যাণপুর কেল্লা – এই কেল্লাটি একটি বিশাল রাজবরির উপর নির্মিত ছিল।
- আমিরি কেল্লা – এই কেল্লাটি ঢাকা আমিরের উপর নির্মিত ছিল।
- কালী দলান কেল্লা – এই কেল্লাটি কালী দলান নামক একটি মন্দিরের উপর নির্মিত ছিল।
- শাহী কেল্লা – এই কেল্লাটি মুগল বাদশাহ আউরঙ্গজেবের উপর নির্মিত ছিল।
লালবাগ কেল্লার নাম হওয়া এর পিছনের গল্প বলা হয় যে এই কেল্লাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পরিচালিত হত। একবার একজন ব্রিটিশ গবেষক এখানে অনুশীলন করতে গিয়ে দেখেন যে কেল্লার ভিতরে একটি লাল রংমণি রয়েছে।
লালবাগ কেল্লার অনন্য বৈশিষ্ট্য
লালবাগ কেল্লার বেশ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য মুঘল যুগের দুর্গ থেকে আলাদা করে তোলে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল দুর্গের দক্ষিণ গেট, যা কালো ব্যাসল্ট পাথর দিয়ে তৈরি এবং এতে জটিল ফুলের নকশা খোদাই করা হয়েছে। গেটটি কয়েকটি ছোট গম্বুজ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, যা কামানের আগুন থেকে গেটটিকে রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
লালবাগ কেল্লার আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল বিবি পরীর সমাধি, যা দুর্গের পূর্ব দিকে অবস্থিত। বিবি পরী ছিলেন শায়েস্তা খানের কন্যা, এবং তার সমাধিটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মুঘল যুগের স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সমাধিটি একটি উত্থিত প্ল্যাটফর্মের উপর নির্মিত এবং এর দেয়ালগুলি জটিল খোদাই এবং রঙিন টালির কাজ দিয়ে সজ্জিত।
এর সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক তাত্পর্য সত্ত্বেও, লালবাগ কেল্লা বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। দুর্গের বেশ কিছু অংশ ভূমিকম্প ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আবার কিছু অংশ ভাঙচুর ও অবহেলার মতো মানবিক কর্মকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, যাইহোক, বাংলাদেশ সরকার দুর্গটিকে তার পূর্বের গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এটি এখন ঢাকায় দর্শনার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
উপসংহার
আশা করি লালবাগ কেল্লার আদি নাম কিএই নিবন্ধটি আপনার পছন্দ হয়েছে, যদি আপনি এই তথ্যগুলি পছন্দ করেন তবে আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করুন।