নৈতিক শিক্ষা কি? উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয়তা

5/5 - (5 votes)

নৈতিক শিক্ষা কি : নৈতিক শিক্ষার অর্থ ও সংজ্ঞা নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন উদ্দেশ্য নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব নৈতিকতা ছাড়া মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নৈতিকতা মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে। নৈতিক শিক্ষা চরিত্র গঠন করে। বলা হয়ে থাকে টাকা নষ্ট হলে কিছুই হারায় না, স্বাস্থ্যের অবনতি হলে কিছু হারায়, কিন্তু চরিত্রের অবনতি হলে সবকিছু হারিয়ে যায়।

নৈতিক শিক্ষা কি (What is Moral Education in Bengali)

নৈতিক শিক্ষা কি

নৈতিক শিক্ষা হল সেই শিক্ষা যা নৈতিক আচরণ ও আচরণের জন্য দেওয়া হয়, যার ফলস্বরূপ শিশুর মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ ঘটে। মানব চরিত্রের সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত মানবিক গুণাবলী গ্রহণ করা হল নৈতিকতা।

এর ধর্ম, সদাচরণ, নৈতিক কর্তব্য ও মানবিক গুণাবলী ইত্যাদি সবই আসে। নৈতিকতা সহজাত নয় কিন্তু তা অর্জিত। প্রকৃতপক্ষে, নৈতিক আচরণ এবং আচরণ হল সমাজ দ্বারা অর্জিত বা শেখা আচরণ। প্রথমে শিশু এটিকে অনুকরণ করে নেয়, তারপর তার নিজের চিন্তাভাবনা এবং আদর্শ অনুসারে। পরিবার, স্কুল, ফ্রেন্ড সার্কেল, সমাজ ও পরিবেশ ইত্যাদির মাঝে থেকেই শিশু এই কাজটি করতে পারে। পরিবার, স্কুল, বন্ধু, ধর্ম, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ থেকে শিশু নৈতিক শিক্ষা লাভ করে।

নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য

ক) নৈতিক শিক্ষার সাধারণ উদ্দেশ্য

নিম্নে নৈতিক শিক্ষার সাধারণ উদ্দেশ্য হল-

1. শারীরিক ও মানসিক শক্তির বিকাশ

শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিশুর শারীরিক ও মানসিক শক্তি যেমন শরীর, মন, স্মৃতিশক্তি, সংকল্প ও সিদ্ধান্ত ক্ষমতা, কল্পনা ও চিন্তাশক্তি ইত্যাদির বিকাশ ঘটানো। শিশুদের নৈতিক বিকাশের জন্য তাদের মানসিক শক্তির বিকাশ প্রয়োজন।

2. ইন্দ্রিয় অঙ্গের প্রশিক্ষণ

শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল শিশুর ইন্দ্রিয় অঙ্গ যেমন চোখ, কান ইত্যাদিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। শিশুর ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষিত হলেই তার সঠিক নৈতিক বিকাশ সম্ভব হবে।

2. যুক্তি শক্তির বিকাশ

শিশুর মানসিক শক্তির বিকাশের পর যুক্তি শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। যুক্তির শক্তির মাধ্যমে শিশু তার চরিত্র ও নৈতিক বিকাশের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

4. নৈতিকতার বিকাশ

শিক্ষার লক্ষ্য শিশুর মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ। নৈতিকতা তিনটি জিনিসের সাথে সম্পর্কিত – শিশুর স্বভাব, শিশুর অভ্যাস এবং শিশুর অনুভূতি। এই তিনটিকে পরিশুদ্ধ করে সুন্দর করে গড়ে তোলার মাধ্যমে শিশুর আচরণ পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।

5. আধ্যাত্মিক বিকাশ

শিক্ষার মূল লক্ষ্য শিশুর আধ্যাত্মিক বিকাশও। আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য বিবেকের বিশুদ্ধতা একান্ত প্রয়োজন। শ্রী অরবিন্দের মতে, “শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল আত্মার বিকাশ ঘটানো যা শিশুর মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়, তার মধ্যে কী আছে তা প্রকাশ করা এবং তাকে সর্বোত্তম কাজের জন্য নিখুঁত করে তোলা।”

(খ) নৈতিক শিক্ষার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য

নিম্নে নৈতিক শিক্ষার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য-

1. শেখার উদ্দেশ্য

বেকনের মতে, “জ্ঞানই শক্তি। তাই নৈতিক শিক্ষার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হল জ্ঞান অর্জন করা বা করা। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, দান্তে, কমেনিয়াম প্রমুখ প্রাচীন শিক্ষাবিদরাও এই উদ্দেশ্যের উপর জোর দিয়েছেন।

2. চরিত্র নির্মাণ

অনেক শিক্ষাবিদ চরিত্র গঠন হিসেবে নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। মহাত্মা গান্ধী এবং হারবার্টের মতো শিক্ষাবিদরা বলেন যে নৈতিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল শিশুদের চরিত্র গঠন করা।

আধুনিক ভারতে নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য

ভারতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদির আদর্শ অর্জনের জন্য নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুদের চরিত্রকে নৈতিক করে তোলা।চরিত্র মানেই ব্যক্তিত্বের অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং ঐক্য। শুধুমাত্র চরিত্রবান মানুষই সৎ, অনুগত এবং তাদের সিদ্ধান্তে অটল।

তাই শিশুদের চরিত্রকে নৈতিক আদর্শে পরিপূর্ণ করার জন্য নৈতিক শিক্ষার অধীনে নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যগুলোর ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে-

1. নৈতিক শিক্ষার লক্ষ্য দেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত হওয়া উচিত। এর মাধ্যমে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

2. নৈতিক শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত জাতির বিভিন্ন ধর্ম, শ্রেণী, সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মানসিক ঐক্যের বোধ গড়ে তোলা।

3. এর লক্ষ্য হওয়া উচিত শিশুদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ করা যাতে ভারতীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়।

4. নিঃস্বার্থ কাজে উদ্বুদ্ধ করাও নৈতিক শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এটি শিশুদের মধ্যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সমাজসেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলে।

5. নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল একজন যোগ্য ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরি করা যাতে গণতান্ত্রিক সমাজ ও শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে।

6. নৈতিক শিক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল জাতিভেদ প্রথা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা, অস্পৃশ্যতা, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির মতো সামাজিক কুপ্রথার অবসান ঘটানো।

নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

নৈতিক শিক্ষা শিশুর আচার-আচরণে পরিবর্তন আনে। শিশুর আচরণের এই পরিবর্তন দেশ ও সমাজের জন্য খুবই প্রয়োজন। নৈতিক শিক্ষাকে অবহেলা করলে শিশুর সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়।

মানুষ প্রকৃতিগতভাবে একটি সামাজিক প্রাণী এবং তাকে সমাজে বসবাস করতে হয়। তাই সামাজিকীকরণের জন্য শিশুকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর সামাজিক বিকাশ ঘটে এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি উদার হয়। নৈতিক শিক্ষা শিশুর ব্যক্তিত্বের সুষম বিকাশ ঘটায়। নৈতিক শিক্ষার অভাবে একটি শিশু যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হতে পারে না। সে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে বুঝতে পারে না, নিজেও উন্নতি করতে পারে না, সমাজ ও দেশের সেবাও করতে পারে না। নৈতিক শিক্ষা মানব জীবনের ভিত্তি। তাই এটি বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

উপসংহার

আশা করি নৈতিক শিক্ষা কি এই নিবন্ধটি আপনার পছন্দ হয়েছে, যদি আপনি এই তথ্যগুলি পছন্দ করেন তবে আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করুন।

Leave a Comment